সালাফে-সালিহীনদের দৃষ্টিতে নিকাহের গুরুত্ব
Salafe-Saliheen er drishti te Nikaher Gurutto
-:নিকাহের ফজিলত ও গুরুত্ব:-
(পর্ব- ২)
প্রথম পর্বে আমরা নিকাহের গুরুত্ব আলোচনা করে বলেছিলাম যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাবেঈন এবং সালাফে সালেহীন রাও শুধু নিকাহের মামুল (বিবাহের রীতি, প্রথা) বজায় রাখেননি;
বরং কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত ফযীলতের দ্বারা বিয়ের ব্যাপারে মানুষকে আকৃষ্ট করে গেছেন।
আর ১ থেকে ৫ পর্যন্ত বিবাহের ব্যাপারে বুজুর্গদের কথা উল্লেখ করেছিলাম, এই পর্বে তার পরেরটা লেখা হচ্ছে।
6. পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে (আগের যুগে) একজন আবিদ (ইবাদতকারী) তার তীব্র ইবাদতের কারণে সে সময়ের মানুষের মধ্যে অগ্রগণ্য এবং সর্বোত্তম হয়ে উঠেছিলেন।
সে সময়ের নবীর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন:
তিনি (সেই ইবাদতকারী) একজন ভাল মানুষ, যদি তিনি একটি সুন্নাত পরিত্যাগ না করতেন (তাহলে আরো ভাল হতো)।
সেই ইবাদতকারী সেই নবীজী (আলাইহিস সালাম) এর এই কথা জানতে পেরে তিনি খুবই দুঃখ পেলেন এবং তিনি নবীজীর কাছে এলেন এবং এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।
তাই তিনি উত্তর দিলেন যে, আপনি নিকাহের সুন্নাত ত্যাগ করেছেন।
তাই আবিদ উত্তর দিল যে আমি এটাকে হারাম মনে করি না, তবে সত্য হল আমি গরীব এবং মানুষের বোঝা (তাই আমি বিয়ে করি না)।
তাই সেই নবীজী বললেন যে আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিবাহ দিচ্ছি।
এবং তাকে তার মেয়ের সাথে বিয়ে দেন।
7. বিশর-ইবন-হারিস (রহঃ) বলেন:
আহমদ ইবনে হাম্বল তিনটি কারণে আমার থেকে আগে বেড়ে গেছে:
- তিনি নিজের এবং পরিবারের জন্য আয় (Income) করেন। আর আমি শুধু নিজের জন্যই আয় করি।
- তিনি বিয়ে (নিকাহ্) করার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে, আর আমি এ ব্যাপারে তার থেকে পেছনে।
- তৃতীয়টি হল তাকে ইমামের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
8. এই কথা বর্ননা করা হয়েছে যে:
হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি তাঁর পুত্র ‘আবদুল্লাহর’ মায়ের (নিজের স্ত্রীর) ইন্তেকালের পরের দিনই দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং বলেন:
“আমি স্ত্রীকে ছাড়া রাত কাটানো পছন্দ করি না”।
9. যখন বিশর ইবনে হারিস (রহঃ) ইন্তেকাল করেন, তখন কিছু লোক তাকে স্বপ্নে দেখে এবং তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।
তিনি জবাব (উত্তর) দিলেন:
“আল্লাহ জান্নাতে (বেহেশতে) আমার মর্যাদা (স্তর) এমন উঁচু করেছেন যে আমি নবী ও রাসূলগণদের মাকাম (স্থান) দেখতে পায়।
তবে পরিবারের দিক থেকে সৌভাগ্যবান দরজায় (স্তরে) পৌঁছাতে পারিনি।
10. এই বিশর ইবনে হারিসকে স্বপ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে হযরত আবু নসর তামারের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে?
বিশর বলেন, তাঁকে আমার থেকে সত্তর দরজা উপরে রাখা হয়েছে।
লোকেরা বললো আমরা তাঁকে দুনিয়াতে আপনার চেয়ে বড় (উঁচু) মনে করিনি।
তখন বিশর ইবনে হারিস (রহঃ) উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি এই মর্যাদা তার সন্তান এবং পরিবারের কষ্টের প্রতি তার সবুর করার (ধৈর্য্য ধারণ করার) কারণে পেয়েছেন।
Salafe-Saliheen er drishti te Nikaher Gurutto
11. কিছু মহাজ্ঞানী মানুষরা বলেছেন যে একজন অবিবাহিত ব্যক্তি একজন বিবাহিত ব্যক্তির চেয়ে উত্তম,
যেমন জিহাদকারী ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির চেয়ে উত্তম।
আর বিবাহিত ব্যক্তির এক রাকাত নফল নামায একজন অবিবাহিত ব্যক্তির সত্তর রাকাত নামাযের চেয়ে উত্তম।
আসল কথা হল আমাদের ধর্ম আমাদেরকে রাহবানিয়াত (সন্ন্যাসবাদ) সম্পর্কে শিক্ষা দেয় না যে:
মানুষ ব্রহ্মচর্য (সন্ন্যাসীর) জীবনযাপন করবে, অথবা সব কিছু ছেড়ে দিয়ে পাহাড় ও গুহায় বসবাস করতে শুরু করে দেবে;
বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের যোগ্য সেই ব্যক্তি যে সুন্নাতের অনুসরণ করে এবং মানুষের সাথে মিলেমিশে জীবনযাপন করে।
এবং যে ব্যক্তি নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করে।
আর এটা স্পষ্ট যে, এই অধিকারগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে কী কী ধাপ অতিক্রম করতে হয় তাদের শালীনভাবে এবং ভালভাবে সহ্য করা একজন মানুষের মর্যাদার উন্নতির দিকে নিয়ে যায়,
এই মর্যাদা অন্য লোকেদের পক্ষে অর্জন করা কঠিন।
তাই সালাফে-সালিহীনদের দৃষ্টিতে নিকাহের গুরুত্ব এত বেশি।
-:আরো পড়ুন:-
বুজুর্গদের দৃষ্টিতে বিবাহের গুরুত্ব
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।