প্রত্যেক আমল নিয়্যতের উপর নির্ভর করে
Prottek Amol Niyoter Upore Nirvor Kore
সম্মানিত ঈমানদার ভায়েরা!
আজ আমরা মানুষের নিয়্যত সম্পর্কে হাদীসে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
“নিয়্যত ” এটা একটি ইসলামের মূল বিষয়।
নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হয় না।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের হিদায়াতের জন্য যেমন কুরআন নাযিল করেছেন, তেমনি কুরআনের বিধি- বিধান বাস্তবায়ন করার জন্যে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মনোনীত করেছেন ও আমাদের কল্যানের জন্য পাঠিয়েছেন।
তাই কুরআনের হুকুম মেনে চলা আমাদের জন্য যেমন জরুরী, অনুরুপ ভাবে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-পন্থা ও হুকুম-আহকাম মেনে চলাও আমাদের জন্য জরুরী।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ২০ নম্বর আয়াতে বলেছেনঃ
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
“হে ঈমানদার ব্যক্তিগন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ (আদেশ) মেনে চল এবং শোনার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেমন নিজের আদেশ মেনে চলতে বলেছেন, অনুরূপ ভাবে, তাঁর রসূলের আদেশও মেনে চলতে বলেছেন।
আর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়েছেন, মৌলিকভাবে তা ৪ প্রকার:
- ইবাদত।
- আখলাক-চরিত্র।
- লেনদেন।
- পারস্পারিক সম্পর্ক।
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ৫ লাখ হাদীসের হাফিয ছিলেন।
তিনি সেই ৫ লাখ হাদীস থেকে ৪৮০০ হাদীস নির্বাচিত করে একটি কিতাব লিখেছেন, যা ‘সুনানে আবু দাউদ’ নামে পরিচিত।
আমরা জানি যে হাদীস শাস্ত্রে বিখ্যাত ৬টি কিতাব রয়েছে, যা ‘সিহাহ্ সিত্তা’ নামে পরিচিত।
এ ৬টি কিতাবের মধ্যে ‘সুনানে আবূ দাউদ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর কিতাবের ভূমিকায় লিখেছেনঃ
“আমি ৫ লক্ষ হাদীস মুখস্ত করেছি এবং তার মধ্য থেকে ৪৮০০ হাদীস আমার এ কিতাবে জমা করেছি।
এর মধ্যে মানুষের দ্বীনের ব্যাপারে ৪ টি হাদীস যথেষ্ট।অর্থাৎ, যদি কেউ এ ৪ টি হাদীসের দাবী অনুযায়ী জীবন-যাপন করে,
তবে সম্পূর্ণ শরীয়ত তথা ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, লেনদেন ও পারস্পরিক সম্পর্ক সবকিছু তার জীবনে চলে আসবে।
তাই আসুন, আমরা সেই চারটি হাদীসের মধ্যে একটি হাদীস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা জেনে রাখি।
প্রথম হাদীসঃ
হযরত উমার (রযি) মিম্বরে বসে বলেছিলেনঃ
আমি আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
“নিশ্চয়ই প্রতিটি আমল (কাজ) নিয়্যত অনুযায়ী হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করবে, সে তা-ই পাবে।”
প্রিয় শ্রোতামণ্ডলী!
এ হাদীস দ্বারা জানা গেল যে, প্রত্যেক আমলের আগে আমাদের নিয়্যত শুদ্ধ করতে হবে।
আমরা যে ইবাদত-উপাসনা করে থাকি, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করতে হবে।
যদি আমরা কোন ইবাদত লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করি যে লোকে আমাকে ভালো বলবে, ইবাদতকারী বলবে, তাহলে সেই ইবাদতের কোন সাওয়াব আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না।
রিয়া কারি অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করাকে ‘শির্কে খফী’ অর্থাৎ গোপন শির্ক বলা হয়েছে।
নামায-রোযা, দান-সাদাকা ইত্যাদি যে কোন ইবাদত যদি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যারা অন্যদের দেখানোর জন্যে ইবাদত করেছিল, তারা তাদের কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে নিক যাদের জন্য তারা আমল করেছিল।
এখানে আর একটি কথা মনে রাখবেন, কোন আমলের সাওয়াব পাওয়া ও না পাওয়া যেমন নিয়্যতের উপর নির্ভর করে,
অনুরূপ ভাবে, আগে ভাগে কোন আমলের নিয়্যত করা ও নিয়্যত না করার উপর নেক আমলের তাওফীক নির্ভর করে।
উদাহরণ স্বরূপ, যে ব্যক্তি দিনে দুই বা তিন’ওয়াক্ত নামায পড়ে, সে যদি নিয়্যত করে যে, আমি এবার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ব, ইনশা আল্লাহ, তাহলে তার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের তাওফীক হবে।
যদি কখনো কোন নামায ছেড়ে যায়, তবে তা আদায় করার চেষ্টা করবে।
অনুরুপ ভাবে, আমরা প্রত্যেকেই দৈনিক যে পরিমান নামায, তওবা- ইস্তেগফার, কালিমা-কালাম ও দুআ দরূদ ইত্যাদি পড়ি, যদি আমরা তার থেকে বেশি পরিমাণ এসব আমল করার নিয়্যত করি, তবে দেখবেন, ইনশা আল্লাহ! বেশি আমল করার তাওফীক মিলবে।
ইসলাম ধর্মে নিয়্যতের গুরুত্ব খুব বেশি
Islam Dhorme Niyoter Gurutto khub Besi
নিয়্যত শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্তরের ইচ্ছা।
তাই প্রত্যেক ইবাদাত (উপাসনা) আল্লাহর কাছে তখনই গ্রহনযোগ্য হবে যখন নিয়্যত সঠিক হবে।
কেননা ইবাদাত উপাসনা সুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেকির আশায় করা জরুরি।
আর সেই ইবাদাত উপাসনা করার সময় যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট বা নারাজ হয়ে যায়, যার কারণে সেই ইবাদাতের সাওয়াব আশা করা মুর্খতার পরিচয়।
আর যে কোন ইবাদাত মানুষকে দেখানো ও মানুষের সন্তষ্টির জন্য করা মানে আল্লাহর সঙ্গে শির্ক বা অংশীদার বানানো, যা আল্লাহ্ কখনোই সহ্য করেন না।
ফরয ওয়াজিব সুন্নাত মুস্তাহাব হারাম হালাল মাকরূহ মুবাহ এর অর্থ কি
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।