পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কিভাবে চিনবেন?
Panch waqt Namazer time kivabe chinben?
প্রিয় বন্ধুগন, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নামাজের সময় সম্পর্কে তথ্য জানবো।
যদি আপনার কাছে সময় দেখার মতো কোনো মেশিন যন্ত্র না থাকে, তাহলে সময় দেখার জন্য কোনো ঘড়ি বা মোবাইল অথবা অন্য কোনো ডিভাইস (মেশিন) ছাড়াই নামাজের সময় দেখে সময়মত নামাজ আদায় করতে পারেন।
ফজরের নামাজের সময়
ফজরের নামাযের সময় ভোর (সুবহে সাদিক) থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে।
“সুবহে সাদিক” অর্থাৎ ভোর সকালে পুর্ব আকাশে একটি আলো দেখা দেয়, এবং সেই আলো দুই দিকে (উত্তর ও দক্ষিণ দিকে) ছড়িয়ে পড়ে তাকেই “সুবহে সাদিক” বলে।
সুবহে সাদিক এবং সুবহে কাযিব এর মধ্যে পার্থক্য
রাতের শেষ প্রহরে, ভোরের সময়, পূর্ব দিকে আকাশে লম্বায় কিছুটা আলো দেখা যায়।
যা কিছুক্ষণ পরেই শেষ হয়ে যায় এবং তারপর অন্ধকার হয়ে যায়, একে বলা হয় “সুবহে কাযিব” (মিথ্যা সকাল)।
তার কিছুক্ষণ পর আকাশের প্রান্তে প্রস্থে (চৌড়া ভাবে) কিছু আলো দেখা দেয় যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং কিছুক্ষণ পর সম্পূর্ণরূপে চারিদিকে আলোকিত হয়ে যায়।
একে বলা হয় “সুবহে সাদিক” (সত্য সকাল) আর এই “সুবহে সাদিক” থেকে ফজরের নামাজের সময় শুরু হয়।
এই সময়ের আগে আগে তাহাজ্জুদ পড়ার অনুমতি আছে।
সুবহে সাদিকের সময় থেকে ইশরাক পর্যন্ত ফজরের দুই রাকাত নামাজ ছাড়া অন্য কোনো নফল নামায পড়া শরীয়তের তরফ থেকে অনুমতি নেই।
সুতরাং কেউ যদি সুবহে সাদিকের পর তাহাজ্জুদ পড়ে তাহলে তাহাজ্জুদ হবে না।
ফজরের নামাযের মুস্তাহাব সময়
ফজরের নামাজ দেরি করে একটু আলো অবস্থায় পড়া মুস্তাহাব।
কিন্তু এতটা দেরি করে পড়া উচিত নয় যে,
যদি কোন কারণে নামায ফাসিদ (বাতিল, অকার্যকর) হয়ে যায় তাহলে ফজরের সময় শেষ হওয়ার (সূর্যোদয় হওয়ার) পূর্বে অযু করে পুনরায় সুন্নত মোতাবেক নামায পড়া যাবে না।
এতটা দেরি করে ফজরের নামাজ পড়া যাবে না।
জোহরের নামাজের সময়
দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সাথে সাথে জোহরের নামাজের সময় শুরু হয়, এবং ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ না সবকিছুর ছায়া তার দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আর যোহরের ওয়াক্ত আসরের সময় শুরু হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
জোহরের নামাযের মুস্তাহাব সময়
গরমকালে জোহরের নামাজ দেরি করে পড়া মুস্তাহাব।
আর শীতকালে তাড়াতাড়ি (প্রথমভাগে) পড়া মুস্তাহাব।
জুম্মার নামাজের সময়
জুমার আসল সময়ও যোহরের সময়ের মতো।
অর্থাৎ যখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়, সেই সময় থেকেই জুমার ওয়াক্ত শুরু হয়।
আর জোহরের ওয়াক্ত শেষ হলে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তও শেষ হয়ে যায়।
আসরের নামাজের সময়
জোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসরের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়।
আর সূর্যাস্ত হওয়া পর্যন্ত আসরের সময় বাকি থাকে।
আসরের নামাজের মুস্তাহাব সময়
আসরের মুস্তাহাব সময় সূর্য তাগায়্যুর (সুর্যের রং পরিবর্তন) হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
গ্রীষ্মকাল হোক বা শীতকাল।
কিন্তু সূর্যে তাগায়্যুর (পরিবর্তন) আসার পর আসরের নামাজের মাকরূহ সময় শুরু হয়ে যায়।
মাগরিবের নামাজের সময়
সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়।
এবং শাফাক (সূর্যাস্তের পর পশ্চিম দিকের লালভাব) শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময় বাকি থাকে।
অর্থাৎ আসরের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়।
এবং শাফাক (পশ্চিমের লালভাব) শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
মাগরিবের নামাজের মুস্তাহাব সময়
মাগরিবের নামাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা মুস্তাহাব।
কোনো ওজর (অজুহাত) ছাড়া মাগরিবের নামাজ দেরি করে পড়া মাকরূহ।
এশার নামাজের সময়
এশার নামাজের সময় রাত্রে সাদা আলো অদৃশ্য হওয়া থেকে শুরু হয় এবং সুবহে সাদিক পর্যন্ত বাকি থাকে।
এশার নামাজের মুস্তাহাব সময়
এশার নামাজ রাতের তৃতীয়াংশ (তৃতীয় ভাগ) পর্যন্ত দেরি করে পড়া মুস্তাহাব।
(এটা ঐ সময় যখন অন্য কোন সমস্যা থাকে না, উদাহরণস্বরূপ, জামায়াতে লোক কম হওয়ার ভয় থাকে না)
আর মধ্যরাত পর্যন্ত এশার নামায পড়া জায়েয আছে, মাকরূহ নয়।
আর কোনো ওজর (অজুহাত, কারণ) ছাড়া মধ্যরাত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরূহ।
বিতর নামাযের সময়
এশার পর বিতর নামাযের সময় (ওয়াক্ত) শুরু হয়।
আর সুবহে সাদিক হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
বিতর নামাযের মুস্তাহাব সময়
যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে ওঠে নামায পড়ার ভরসা করতে পারে না তার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে বিতর পড়া মুস্তাহাব।
আর যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে উঠে বিতর পড়ার ভরসা রাখে, সে রাতে ঘুম থেকে উঠে বিতর পড়ব।
ইশরাক নামাজের সময়
সূর্যোদয়ের প্রায় 15-20 মিনিট পর (মাকরূহ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর) ইশরাক নামাজের সময় শুরু হয়।
চাশতের নামাজের সময়
চাশতের নামাযের সময় সূর্যোদয় থেকে যাওয়াল পর্যন্ত বাকি থাকে;
তবে চাশতের নামাজ দিনের এক-চতুর্থাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর পড়া উত্তম।
জাওয়াল ঐ সময় কে বলে যখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়।
জাওয়ালের সময় শুরু হলে নামায পড়া নিষিদ্ধ নয় এবং মাকরূহও নয়।
জাওয়ালের সময় নিঃসন্দেহে নামাজ পড়া যেতে পারে।
অপরদিকে, একটি সময় আছে যাকে “ইস্তিওয়া-এ-শামশ” বলা হয়।
“ইস্তিওয়া” হল এমন সময় যখন সূর্য দুপুরে সম্পূর্ণভাবে মাথার উপরে থাকে।
এ সময়ে (ইস্তিওয়ার সময়ে) নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী, অর্থাৎ নামায পড়া জায়েয নয়।
“ইস্তিওয়ার” কয়েক মিনিট পর জাওয়ালের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সে সময় নামাজ পড়া জায়েয আছে।
এটা সঠিকভাবে খুঁজে বের করা খুব কঠিন, তাই সতর্কতা অবলম্বন করে ইস্তিওয়ার আগে ৫ মিনিট এবং তার পরে ৫ মিনিট পরে নামাজ পড়াই উচিত।
অর্থাৎ মোট ১০ মিনিট পর নামাজ পড়া উচিত।
ইস্তিওয়া চেনার পদ্ধতি
দুপুরের কাছাকাছি একটা সোজা কাঠি মাটিতে পুঁতে দিন, তার ছায়া কমতে থাকবে।
যে জায়গায় ছায়া কম হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, সেটাই হল “ইস্তিওয়া-এ-শামশ”-এর সময়।
এ সময় (ইস্তিওয়া-এ-শামশ এর সময়) নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরীমি (নাজায়েজ)।
অতঃপর যখন অপর দিকে ছায়া বাড়তে থাকে, তখন অপর দিকে বাড়তে থাকা এই ছায়ার নাম হলো যাওয়াল-এ-শামশ।
আর জাওয়ালের সময় শুরু হয়ে গেলে নামায পড়া জায়েয হয়ে যায়।
মানুষের মধ্যে এই কথা ভুল প্রচলিত হয়ে গেছে যে, জাওয়ালের সময় নামায পড়া জায়েয নয়, এটা সম্পূর্ণ ভুল।
আসলে, “ইস্তিওয়ার” সময় নামায পড়া জায়েয নয়।
লোকেরা জাওয়াল বলে “ইস্তিওয়া” বোঝাতে চায়।
ঈদের নামাজের মুস্তাহাব সময়
উভয় ঈদ (ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহা) নামাজের সময় সূর্যোদয়ের প্রায় 20 মিনিট পরে শুরু হয়।
এবং “ইস্তিওয়া” (দুপুর) পর্যন্ত বাকি থাকে।
প্রত্যেক আমল নিয়্যতের উপর নির্ভর করে
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।