নবীজীর প্রতি মুসলমানদের কতটা ভালোবাসা হতে হবে?
Nobijir proti Musalman der koto ta valobasa hote hobe?
সম্মানিত সুধীবৃন্দ! আজ আমরা নবীজির ভালোবাসা সম্পর্কে আলোচনা করব।
আমরা জানি, প্রতিটি মুসলমানের কাছে এই রবীউল আওয়াল মাসটি অত্যন্ত স্মরণীয় মাস।
কেননা, এ মাসে নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এ মাসেই তাঁর ওফাত (ইন্তেকাল) হয়েছিল।
সেজন্য একদিকে মুসলিম উম্মাহর নিকট এ মাসটি যেমন অত্যন্ত খুশির মাস, তেমনি অন্যদিকে অত্যন্ত দুঃখের মাস।
মনে রাখবেন, নবীজির জীবনচরিত নিয়ে যতবেশি আলোচনা করা হবে, তাঁর প্রতি ততবেশি ভালোবাসা পয়দা হবে।
আর নবীজির প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা ঈমানের আলামত।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা আহযাবের ৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন:
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
অর্থ: নবীজী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ।”
অতএব, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ, তখন তাঁকে সৃষ্টিজগতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা মু’মিনদের ঈমানের দাবি।
স্বয়ং নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলেছেন।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ হুরাইরাহ (রযি) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
অর্থ: “তোমরা ততক্ষণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা-মাতা, সান্তনা সন্ততি ও সমস্ত মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হব।”
এটি সহীহ বুখারীর ১৫ নম্বর হাদীস।
একটি ঘটনা
সম্মানিত ঈমানদার ভায়েরা! নবীজির প্রতি মহব্বত কেমন হওয়া উচিৎ, এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সহীহ বুখারীর ৬৬৩২ নম্বর হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম (রযি) বলেছেনঃ
একবার আমরা কোন এক সফরে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম।
তখন নবীজি হযরত উমারের হাত ধরে হাঁটছিলেন।
হযরত উমার নবীজিকে বললেন:
يَا رَسُولَ اللَّهِ ! لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا مِنْ نَفْسِي
“হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির চেয়ে বেশি প্রিয়; তবে আপনি আমার নিজের জানের চেয়ে বেশি প্রিয় নন।
এ কথা শুনে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
لَا ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ
“সেই আল্লাহর কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ আছে, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার নিকট তোমার নিজের জানের চেয়ে অধিক প্রিয় না হব।”
তখন হযরত উমার বললেনঃ তাহলে আল্লাহর কসম করে বলছিঃ এবার আপনি আমার নিকট আমার নিজের জানের চেয়েও অধিক প্রিয়।
এর উত্তরে নবীজি বললেনঃ হে উমার! এবার তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হল।
নবীজিকে ভালোবাসার ফযীলত
Nobiji ke Valobashar Fozilot
সুধীবৃন্দ! বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ মুসলিম যুবকদের দেখা যায়, তারা নায়ক ও প্লেয়ারদেরকে জীবনআদর্শ বানিয়ে রেখেছে।
কথাবার্তা, ওঠা-বসা, চলাফেরা, লেবাস-পোশাক, এমনকি চুলের কাটছাটের ক্ষেত্রেও তারা ফাসেক-ফাজেরদেরকে ফলো করে চলে।
অথচ একজন ঈমানদার ব্যক্তির সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হল, বিশ্বনবীর জীবনাদর্শ।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা আহযাবের ২১ নম্বর আয়াতে এ কথাই বলেছেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের জীবনের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।”
সহীহ বুখারীর ৩৬৮৮ নম্বর হাদীসে হযরত আনাস (রযি) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ
একদিন কোন একব্যক্তি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিল, কিয়ামত কবে হবে?
এর উত্তরে নবীজি বলেছিলেনঃ তুমি কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ?
সেই লোকটি বলেছিলঃ তেমন কিছু না, তবে আমি আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলকে ভালোবাসি।
অর্থাৎ, আমি বেশি কিছু ইবাদত করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসি।
তার এ কথা শুনে নবীজি বলেছিলেনঃ
أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ
“তুমি (কিয়ামতের দিন হাশর মাঠে) তার সঙ্গী-সাথী হবে, যাকে তুমি ভালোবাস।”
এ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আনাস (রযি) বলেছেনঃ
নবীজিকে ভালোবাসার ফযীলত
পৃথিবীর কোন কিছু থেকে আমি কখনই এতটা খুশি হয়নি, যতটা নবীজির এ কথা দ্বারা খুশি হয়েছিলাম।
কেননা, নবীজি বলেছেনঃ তুমি কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে, যাকে তুমি ভালোবাস।
হযরত আনাস (রযি) বললেনঃ
আমি তো রসূলুল্লাহ, আবু বকর ও উমারকে ভালোবাসি। আমি আশা করি, তাঁদেরকে ভালোবাসার কারণে আমি তাদের সঙ্গেই থাকব; যদিও আমি তাঁদের মতো আমল করতে পারিনি।
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।