প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা New Year Celebration (নববর্ষ বা নতুন বছর উদযাপন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু কথা ও এই সময়ে মুসলমানদের করনীয় আমল কি? সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
নববর্ষ উদযাপন ও মুসলমানদের করনীয় আমল
New Year Celebration and Muslims
নববর্ষ উদযাপন ও মুসলমানদের করনীয় আমল-New Year Celebration and Muslims
নবী (সাঃ) কি নববর্ষ উদযাপন করছেন?
সাহাবায়ে কেরাম গন কি একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন?
তাবিয়ীন ও তাবে তাবিয়ীনদের সময়ে কি এই রসম বা প্রথা উদযাপন করা হতো?
বিভিন্ন মুসলিম শাসকরা কি তার উদযাপনে অংশগ্রহণ করতেন?
যদিও সেই সময় ইসলাম ইরান, ইরাক, মিশর, সিরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এসব এমন প্রশ্ন যে প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নেতিবাচক (না বলে) উত্তর দেবেন।
তাহলে আজ মুসলমানরা কেন এই কাজ করছে?
আসলে, এটি কারা আবিষ্কার করেছে?
কোন জাতি এই নববর্ষ উদযাপন করে?
এই সময়ে মুসলমানদের করনীয় আমল কি ও কি করা উচিত?
এই কয়েকটি লাইনের মধ্যে এ সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিশ্বের সকল ধর্ম ও জাতির উৎসব ও খুশি উদযাপনের ভিন্ন ভিন্ন উপায় রয়েছে।
প্রতিটি উৎসবের কিছু পটভূমি থাকে এবং প্রতিটি উৎসবই কিছু না কিছু বার্তা ও শিক্ষা দেয়।
যাতে সৎকাজ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয় এবং মন্দ কাজ বন্ধ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়;
কিন্তু মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বা অবনতির কারণে তাদের মধ্যে কিছু এমন বেদাত, অশ্লীলতাও যুক্ত হয়ে যায় যে তাদের আসল উদ্দেশ্যই বাকি থাকে না।
যেমন যেমন এই পৃথিবী উন্নতির দিকে এগিয়ে গেছে এবং সভ্য হয়ে ওঠেছে, তেমনি মানুষরা সংস্কৃতি ও শিল্পের নামে নতুন উদযাপন ও উৎসব পালন করতে শুরু করেছে।
তার মধ্যে একটি হল নববর্ষ উদযাপন করা।
নববর্ষ উদযাপন ও মুসলমানদের করনীয় আমল
নববর্ষ উদযাপন করতে মুসলমানদের ক্ষতি কি?
নববর্ষ উদযাপন ও মুসলমানদের করনীয় আমল-New Year Celebration and Muslims
আসলে এই নববর্ষ উদযাপন খ্রিস্টানদের দ্বারা উদ্ভাবিত।
খ্রিস্টানদের মধ্যে নববর্ষ উদযাপনের প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
এর একটি কারণ তাদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী, ২৫ ডিসেম্বরে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়।
এই সম্মানে ক্রিসমাস ডে (Christmas Day বড়দিন) পালন করা হয়,
যার কারণে বিশ্বজুড়ে উৎসবের আমেজ চলতে থাকে, আর এই অবস্থা নতুন বছরের আগমন পর্যন্ত বাকি থাকে।
নববর্ষ উদযাপনে সারা দেশে চারিদিকে লাইটিং (রঙিন আলো) ও আতশবাজি দিয়ে সাজানো হয়ে।
আর ৩১ ডিসেম্বরের রাত ১২টার জন্য অপেক্ষা করা হয়।
এবং 12 টা বাজার সাথে সাথে তারা একে অপরকে Happy New Year (শুভ নববর্ষ)-এর অভিনন্দন জানায়।
কেক কাটা হয়, চারিদিকে Happy New Year (শুভ নববর্ষ)-এর কথা শোনা যায়।
আতশবাজি করা হয়, এবং বিভিন্ন নাইট ক্লাবে বিনোদন ও রং তামাশার প্রগ্রাম (অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠিত হয়।
যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান ও নাচগানের ব্যবস্থা করা হয়;
কারণ তাদের বিনোদন ও রং তামাশা শুধুমাত্র দুটি জিনিস দ্বারা সম্ভব:
- মদ।
- নারী।
আজ, এই খ্রিস্টানদের মতো, অনেক মুসলমানও নতুন বছরের অপেক্ষায় থাকে।
আর ৩১শে ডিসেম্বরের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
এই মুসলিমরা তাদের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে নীচু (ছোট) ও তুচ্ছ মনে করে নববর্ষ উদযাপন শুরু করা শুরু করেছে।
অথচ এটি খ্রিস্টানদের ইতিহাসের নির্দেশিত ব্যবস্থা।
মুসলমানদের নিজস্ব চন্দ্র ইসলামি ইতিহাস রয়েছে, যা মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মুহাররম মাস দিয়ে শুরু হয়, এটাই ইসলামী ক্যালেন্ডার;
কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমাদের অধিকাংশ মুসলিম ভাইরা এটি সম্পর্কে কিছুই জানে না, কোন খবর রাখে না।
আজ মুসলমানরা নববর্ষ আগমনের উদযাপন করে।
তারা কি তা এটা জানে না যে এই নতুন বছর এসে তার জীবনের এক বছর কমে গেছে।
জীবন আল্লাহ দেওয়া একটি বহু মূল্যবান নেয়ামত (উপহার)।
আর নেয়ামত নষ্ট ও কম হয়ে গেলে কোন উৎসব পালন করা হয় না; বরং আফসোস ও অনুতপ্ত হয়।
বিগত বছরটি তিক্ত অভিজ্ঞতা, সুন্দর স্মৃতি, আনন্দময় ঘটনা এবং দুঃখজনক দুর্ঘটনা অতিবাহিত হয়ে চলে যায়।
এবং মানুষকে জীবনের অস্থিরতার বার্তা দিয়ে বিদায় জানায়।
বছর শেষ হলেই জীবনের বসন্ত শেষ হয়ে যায়, আর মানুষ তার নির্ধারিত জীবনকালের পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
এ কথাই কবি বলেছেনঃ
অলস, ঘড়ি তোমাকে এই ঘোষণা দেয়
চক্র জীবনের আরেকটি মুহুর্তকে কম করে দেয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আমি কখনো কোনো কিছুর জন্য এতটা দুঃখিত ও লজ্জিত হইনি, যতটা দিনের শেষে সূর্য ডুবে যাওয়ার কারণে দুঃখিত ও লজ্জিত হয়।
যাতে আমার একদিন কম হয়ে গেছে এবং আমার আমল বাড়ানো যায়নি।
হাসান বসারী (রাহঃ) বলেছেনঃ হে আদম সন্তান!
দিনের সমষ্টি, যখন তোমার একটি দিন কেটে যায়, তখন বুঝবে যে তোমার একটি অংশ কেটে গেছে।
(উপরের রেফারেন্স)
এই বয়স ও জীবন যা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পরকালের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।
যাতে আমরা এর দ্বারা পরকালের জীবনকে ভাল ও উন্নত করতে পারি এবং নিজের আমলগুলো (কাজগুলো) ভাল বানাতে পারি।
হজরত আলী (রাঃ) বলেন, এ দিনগুলো তোমার জীবনের কিতাব (বই, গ্রন্থ) নেক আমল দ্বারা এগুলোকে দীর্ঘ কর।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
مِنْ حُسْنِ إسْلاِمِ الْمَرْءِ تَرْکُہمَالاَیَعْنِیْہِ۔
(তিরমিযী ২/৫৮)
অনুবাদঃ মানুষের ইসলামের গুণ হল তার অনর্থক কাজগুলোকে পরিহার করা।
এ সব উৎসবগুলো ইহুদি ও খ্রিস্টান ও অন্যান্য জাতির মধ্যে বিভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত করা হয়;
যেমন: Mother Day (মা দিবস) Father Day (বাবা দিবস) Valentine’s Day (ভালোবাসা দিবস) Children’s Day (শিশু দিবস) এবং (Teachers’ Day) শিক্ষক দিবস ইত্যাদি;
কারণ তারা সম্পর্কের মধ্যে লোক দেখানো করে।
মা-বাপ কে আলাদা রাখা হয়,
বাচ্চাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়।
আর পরিবারের কোন ব্যবস্থা থাকে না,
তাই তারা সবার জন্য আলাদা আলাদা দিন ধার্য করে রেখেছে, যাতে তার দ্বারা এই সমস্ত সম্পর্ককে লোক দেখানো ভাবে করা হয়;
কিন্তু আমাদের (মুসলিমদের) এখানে এরকম নেই।
ইসলাম প্রত্যেকের হক (অধিকার) নির্ধারণ করে দিয়েছে, আর পুরো পরিবারের ব্যবস্থা আছে;
অতএব, আমাদের এই সমস্ত লোক দেখানো প্রথা গুলোর প্রয়োজন নেই, আর ভিন্ন নির্দিষ্ট দিবস পালন করার দরকার নেই;
বরং মুসলমানদের তা পরিহার ও পরিত্যাগ করা একান্ত প্রয়োজন;
যাতে আমরা অন্য জাতির অনুকরণ ও অনুসরণ বেঁচে থাকতে পারি;
কারণ আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) আমাদেরকে অন্যদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّہَ بِقَوْمٍ فَھُوَ مِنْھُم۔
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।”
(আবু দাউদ 2/203)
নতুন বছর শুরু হলে যে দুআ পড়তে হয়
Dua for New Year
এখন প্রশ্ন হল, এ উপলক্ষে মুসলমানদের কি কাজ করা উচিত যা কুরআন ও হাদীসের আলোকে সঠিক হবে?
নতুন বছর সম্পর্কে কোন আমল খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে তবে নবী, সাহাবী, তাবেয়ীন ও তাবা তাবেয়ীন যুগে অন্য কোনো আমল খুঁজে পাওয়া যায়নি;
তবে হাদীসের কিছু কিতাবে এই রেওয়ায়েত পাওয়া যায় যে,
যখন নতুন মাস বা নতুন বছরের প্রথম মাস শুরু হতো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ একে অপরকে এই দোয়া শিখাতেন এবং বলতেন:
”اللّٰھُمَّ أدْخِلْہُ عَلَیْنَا بِالأمْنِ وَ الإیْمَانِ، وَالسَّلَامَةِ وَالإسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِّنَ الرَّحْمٰنِ وَجِوَازٍمِّنَ الشَّیْطَانِ“
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে নিরাপত্তা ও ঈমান, শান্তি ও ইসলাম এবং পরম করুণাময়ের কাছ থেকে সন্তুষ্টি এবং শয়তান থেকে হেফাজতের সাথে প্রবেশ করান।”
এই দুআ পড়া দরকার;
New Year Celebration and Muslims
এছাড়াও, এই সময়ে মুসলমানদের বিশেষভাবে দুটি কাজ করা উচিত।
অর্থাৎ, নতুন বছর আমাদেরকে বিশেষভাবে দুটি জিনিসের দিকে ধাবিত করে:
- অতীতের আমলের হিসাব
- আগামী আমলের পরিকল্পনা।
Continue……………Wait for next Update, Jazakallahu for Reading.
-:আরো পড়ুন:-
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।