নামাযের মধ্যে ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
Namazer Moddhe koiti Wajib o ki ki?
ওয়াজিব, নামাযের মধ্যে সেই কাজগুলো কে বলা হয় যা নামাজের মধ্যে আদায় করা খুবই জরুরী।
নামাযের মধ্যে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে বা কম বেশি করলে সাহু সিজদা না করলে নামাজ হয়না।
অনুরুপ ভাবে, নামাযের মধ্যে যত ফরয আছে তা ছেড়ে দিলে বা কম করলে নামাজ মোটেই হবে না।
যেমন: রুকু করা ফরয, সেজদা করা ফরয, ইত্যাদি।
কিন্তু কোন ফরযকে বেশি করে দিলে সাহু সিজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে, কম করলে নামাজ মোটেই হবে না।
নামাজের ওয়াজিব যদি ভুল করে ছেড়ে যায় তাহলে সেজদা সাহু করলে নামাজ হয়ে যাবে।
আর ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নামাজ ঘুরিয়ে পড়তে হবে, সাজদা সহু করলেও নামাজ হবে না, অর্থাৎ নামাজ মাকরূহ তাহরীমী হবে।
নামাজের ওয়াজিব গুলো তুলনামূলক একটু কঠিন।
তাই প্রতেকটি ওয়াজিব মনোযোগ সহকারে কয়েকবার পড়ে দেখবেন।
তাহলে ওয়াজিবগুলো বুঝতে সহজ হবে এবং তা আয়ত্ত্বে চলে আসবে ইন শা আল্লাহ্।
1. ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং সুন্নত, নফল, ওয়াজিব নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব ।
আর ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের শেষের ২ রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নত, ওয়াজিব নয়।
(মোট কথা, সূরা ফাতিহা প্রত্যেক নামাজের প্রতি রাকাতেই পড়তে হবে)
[বুখারি: ৭৫৬]
2. ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা বা কমপক্ষে ছোট তিন আয়াত পাঠ করা ওয়াজিব ।
[মুসলিম: ৪৫১]
[বাকি ২ রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না]
3. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব ।
[বুখারী- ৭৭৬]
4. সূরা ফাতিহা অন্য সূরার আগে পাঠ করা ওয়াজিব।
[মুসলিম- ৪৯৮]
5. তারতীব অর্থাৎ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নামায আদায় করা ওয়াজিব ।
অর্থাৎ নামাযে যে সকল কাজগুলো বারে বারে আসে ঐ সমস্ত কাজগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ওয়াজিব ।
অর্থাৎ রুকু এবং সিজদা যা নামাযের প্রতি রাকাতে বারে বারে আসে। কিরাত পাঠ করা শেষে রুকু করা, রুকু করে দাঁড়িয়ে আবার সিজদা করা।
নামাযের মধ্যে যে ধারকবাহিকতা (পরস্পর কাজ গুলো করা) এটাও ওয়াজিব ।
[তিরমিযী- ২৪৬]
6. ৩ অথবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের ২ রাকাত শেষ করে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে, সে পরিমাণ সময় পর্যন্ত বসে থাকা ওয়াজিব ।
[বুখারী- ৮২৮]
7. ৩ অথবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজের উভয় বৈঠকেই আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব ।
[বুখারী- ৮৩০]
নামাযের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?
Namazer koiti Wajib o ki ki?
8. নামাজের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করা ওয়াজিব ।
অর্থাৎ পরস্পর দুটো সিজদা করা, প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া শেষ করে সাথে সাথে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
[তিরমিযী- ৩০২, ৩০৩]
[এক্ষেত্রে কোনো রাকাতে যদি একবারের বেশি রুকু করে ফেলে কিংবা ৩ টি সিজদা করে ফেলে,
9. নামাজের সব রুকন (নামাযের ফরয গুলো) ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
অর্থাৎ রুকু, সিজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে স্থির ভাবে দাঁড়ানো ও বসা ওয়াজিব ।
[মুসলিম- ৩৯৭]
10. বেতের নামাজের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে, হাত ছেড়ে দিয়ে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে পুনরায় হাত বেধে দুআ কুনুত পড়া হচ্ছে ওয়াজিব ।
[বুখারী: ১০০২]
আর পুনরায় হাত তুলে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নত।
অনুরুপ ভাবে খাস (বিশেষ) ভাবে “আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়া নাস্তাখফিরুকা” এই দুআয়ে কুনুত টা পড়া সুন্নত।
[দুআ কুনুত না পারলে দোয়ায় কুনুতের স্থানে কুরআনে বর্ণিত যেকোনো একটি দুআ পড়া।
যেমন- রব্বানা আতিনা ফিদ-দুনয়া.. দোয়াটি পড়া এবং দুআয়ে কুনুত মুখস্থ করার দৃঢ় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া]
11. জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামের জন্য যোহর, আসর এবং দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আস্তে পড়া।
আর ফজর, মাগরিব, এশা, জু’মআ, দুই ঈদ, তারাবি ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত শব্দ করে জোরে পড়া ওয়াজিব ।
[মুসলিম- ২৫৯, নাসাঈ- ৯৭০, তিরমিজি ১/১০৬]
[মনে রাখতে হবে, আস্তে পড়ার অর্থ মনে মনে পড়া নয়। বরং আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে পড়াকে বুঝানো হয়েছে।
কারন মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর মহিলারা সব সময় এভাবে আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে সূরা কিরাত পাঠ করবে]
12. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা ওয়াজিব ।
[মুসনাদে আহমাদ- ১৯৭৩৪]
13. দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় ভিন্নভাবে তাকবীর বলা ওয়াজিব ।
[মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক- ৫৬৮৬]
[তবে এই তাকবীরটি অন্যান্য নামাজে সুন্নত]
14. নামায শেষে “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্ল-হ” বলে নামায শেষ করা ওয়াজিব ।
[বুখারী- ৮৩৭]
-:আরো পড়ুন:-
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।