নামাজ কবুল হওয়ার শর্ত কি
Namaz Qabul howar sharto ki?
নামাজ কবুল হওয়ার শর্ত
নামায কবুল হওয়ার জন্য যেমন নেক নিয়ত (সঠিক নিয়ত) থাকা দরকার অনুরূপ ভাবে শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী নামায আদায় করাও আবশ্যক।
আরকান (নামাযের ফরয সমূহ) এর মধ্যে কম বা বেশির সাথে যে সালাত আদায় করা হয় সেই নামাজ মোটেই কবুল হবে না, নিয়ত যতই বিশুদ্ধ হোক না কেন।
কেননা শুধু সেই ইবাদত কবুল হয় যা শরীয়তের নির্দেশ ও নিয়মনীতি মোতাবেক হয়।
তাই আমাদের নামাজের প্রয়োজনীয় সকল বিষয় জানা থাকা আবশ্যক;
যাতে আমাদের নামাজ সর্বদিক দিয়ে কামিল (পরিপূর্ণ) হয় এবং আমরা আল্লাহর রহমতে এই বড় ও মহান ইবাদতের সওয়াব পেতে পারি,
কুরআন মজীদে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা বাকারায় ২৩৮ নং আয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শিক্ষা দিয়ে বলেন-
নামাজ ও মধ্যবর্তী নামাজের হেফাযত করুন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে জান।
(আল-বাকারা: 238)
এই আয়াতের মধ্যে আদব (নম্রতার সাথে) নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর নামাযের আদব (নম্রতা ও ভদ্রতা) হল, তা সম্পূর্ণরূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত অনুযায়ী আদায় করা।
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য “এহসান” জরুরী
Ibadat qabul howar jonno “Ihsan” zaruri
“ইহসান” মানে জওহর (নিষ্ঠা ও সততা) যা ঈমান ও ইসলামের বাহ্যিক রূপ,
অর্থাৎ সঠিক মান (সঠিক গুণ) এবং আল্লাহর ইবাদতের সৌন্দর্য ও গুণ বজায় রাখে (প্রতিষ্ঠা করে)।
আর ইবাদতের এই সঠিক মান (গুণ) ও সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে বান্দা কে আল্লাহর সম্পূর্ণ নৈকট্য এবং প্রকৃত ইবাদতের স্থান দান করে থাকে।
সেই জওহর দ্বারা মানুষ কিভাবে তার নামাজকে সুন্দর করবে?
এর জন্য হাদীসের মধ্যে খুব সুন্দর একটি পদ্ধতিটি বলা হয়েছে যে,
তুমি এমন ভাবে ইবাদত করো যেন তোমার মনে হয় যে তুমি আল্লাহ্ কে দেখতে পাচ্ছো,
আর যদি এ রকম মনে না করতে পারো (যে তুমি আল্লাহ্ কে দেখতে পাচ্ছো না) তাহলে এটা তো অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ্ তো আমাকে দেখছে।
অর্থাৎ যখন তুমি নিজের প্রভুর (আল্লাহর) উপাসনা করবে, তখন এমনভাবে ইবাদত করবে যেন একজন বান্দা (গুলাম, দাস, চাকর) তার মনিব কে (মালিক কে) সামনে দেখে তার সেবা করে।
এটা সত্য যে, যদি একজন দয়ালু প্রভু তার চোখের সামনে থাকে এবং একজন গোলাম তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে তার কর্তব্যের মর্যাদা আলাদা হয়।
সেই সময়ে, গুলাম (ক্রীতদাস, চাকর, কাজের লোক) শুধুমাত্র সম্পূর্ণরূপে সতর্ক থাকে না বরং শিষ্টাচার ও ভদ্রতা পালন করার সাথে সাথে তার কাজের ধরনটিও সম্পূর্ণ আলাদা হয়:
পক্ষান্তরে মনিব (মালিক) তার সামনে না থাকলে অবশ্যই চাকর (দাস) তার কাজ করে ঠিকই,
কিন্তু সে সময় না সে ততটা মনোযোগ, ভদ্র ও বিনয় ও কাজ করার ধরনের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
একইভাবে এই অবস্থাকে মাথায় রেখে ইবাদতকারী যদি ইবাদতের সময় এমন অবস্থা অর্জনে সফল হয় যে সে আল্লাহকে দেখছে,
তখন সুখ, আনন্দ ও নম্রতার যাবতীয় গুণাবলি ও অবস্থা আপনাআপনিই উদ্ভূত হবে।
আর এভাবেই তার ইবাদত প্রকৃত ইবাদতের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে।
আর এই ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে।
দোয়া ও নামাজ কবুল হওয়ার জন্যও ইহসান আবশ্যক।
ইবাদতের এই পর্যায়কে বলা হয়েছে “হাকীকী ইহসান”।
যাকে সুফিবাদ “মুশাহাদা ও ইস্তেগরাক” নামে পরিভাষায় চিহ্নিত করেছেন।
আসল কথা এই যে, এটি হল সর্বোচ্চ স্তর এবং উপাসনার সব চেয়ে উঁচু স্থান, যেখানে পৌঁছানো সাধারণ মানুষের জন্য এতটা সহজ নয়।
অতএব, সবচেয়ে সহজ উপায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে,
আপনি যখন আল্লাহর ইবাদত করবেন, তখন মনে রাখবেন যে আপনি একজনের (আল্লাহর) সামনে দাঁড়িয়ে আছেন যার ইবাদত করছেন।
এবং যদিও আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না, তিনি অবশ্যই আপনাকে দেখছেন।
আপনার প্রতিটি কাজে তার নজর রয়েছে।
আর আপনার সমস্ত কাজ, চাল-চলন, কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই।
এই বিশ্বাস ও বিশ্বাসের দ্বারা আপনার ইবাদতে অনেকাংশে সুখ, আনন্দ ও বিনয়ের উদয় হবে এবং ইবাদতের হক অনেকাংশে পূরণ হবে।
হাদীসে ইবাদতের এই অবস্থাকে “ইহসান ” বলা হয়েছে।
আসুন আমরা সকলে ইহসানের সহিত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি।
শুধু মাত্র নামায নয়, এই ভাবে প্রতিটি ইবাদত করার চেষ্টা করি।
আল্লাহ্ তাবারক ওয়া তায়ালা আমাদেরকে এহসানের সহিত নামাজ বা সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
-:আরো পড়ুন:-
নামাজ সকল পাপ ও মন্দ কাজ থেকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখে?
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।