নামাযের মধ্যে কিভাবে চুরি করা হয়?
Namaz er moddhe ki vabe churi kora hoi?
নামাযের মধ্যে চুরি
অনেক নামাযের পাবন্দী ব্যক্তিরা দীর্ঘ বয়স্ক হয়ে যাওয়ার সত্ত্বেও তারা নিজেদের নামাজ সংশোধন ও সঠিক করে নেওয়ার চিন্তা করে না,
এবং তারা নামাজের আরকান (ফরয ও শর্ত) সম্বন্ধে সমানভাবে ঘাটতি ও অবহেলা করার অভ্যাসের ওপর অটল থাকে।
এবং যত দ্রুত সম্ভব ও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ও তাড়াহুড়ো করে প্রত্যেক নামাজকে সম্পুর্ণ করার চেষ্টা করে।
ফালতু ও অপ্রয়োজনীয় কাজকর্মে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করে কিন্তু নামাজে কয়েক মিনিট সময় লাগানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
অথচ, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন ব্যক্তিকে নিকৃষ্ট চোর বলেছেন, যে নামাযের প্রয়োজনীয় আমলগুলোকে সংক্ষিপ্ত ও তাড়াহুড়ো করে আদায় করে।
একটি বর্ণনায় (হাদিসে) আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে নামাজের মধ্যে চুরি করে।
সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূলুল্লাহ্!
নামাজের মধ্যে কিভাবে চুরি করা হয়?
তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
“(নামাযের চোর সেই ব্যক্তি) যে নামাজের মধ্যে রুকু ও সেজদা পরিপূর্ণ করে না।”
এর অর্থ হ’ল এই যে একজন ব্যক্তি কেবল দ্রুত বেগে নামাজ আদায় করে, যেন মনে হয় যে সে কারুর প্রতি আক্রমণ করছে।
(আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ০১/১৯৮)
নামাজের মধ্যে চুরি করলে কি হবে?
বাহ সুবহান আল্লাহ! কি চমৎকার উদাহরণ,
অর্থাৎ নামাজের চোর সম্পদ (টাকাপয়সা) চোরের চেয়েও খারাপ।
কারণ মাল (সম্পত্তি) চুরি করার কারণে চোর শাস্তি পেলে তার সাথে সাথে তার কিছু লাভ ও সুবিধা পেয়ে থাকে।
কিন্তু নামায চুরির জন্য সে তার জন্য সম্পূর্ণ শাস্তি পাবে, কিন্তু কোন কিছু তার লাভ হবে না।
অনুরুপ ভাবে সম্পত্তি চুরির মাধ্যমে “হুকুকুল ইবাদ” (কোন ব্যক্তির হক্ক ও অধিকার) নষ্ট করা হয়।
আর নামাজ চুরির মাধ্যমে “হুকুকুল্লাহ” (আল্লাহর হক) নষ্ট করা হয়।
তাছাড়া যে সম্পদ চুরি করে সে দুনিয়াতে শাস্তি পায় এবং পরকালে (মৃত্যুর পর) শাস্তি থেকে রক্ষা পায়।
কিন্তু নামাজের সময় যে চুরি করে তার ক্ষেত্রে এমনটি নয়, অর্থাৎ ক্ষমা হয় না।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে, মালিক সম্পদ চোরকে ক্ষমা করতে পারে,
কিন্তু নামাজের চোরকে ক্ষমা করার কোনো উপায় নেই।
বিবেচনা করুন যে যখন নামাযে ঘাটতি ও অবহেলা কারি ব্যক্তির এই অবস্থা হয়,
তাহলে যারা কিছু নামাজ পড়ে না বা পুরোপুরি নামাজ মোটেই পড়ে না তাদের অবস্থা কী হবে?
একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেই ব্যক্তির নামাজের দিকেও তাকিয়েও দেখে না,
যে ব্যক্তি রুকু ও সেজদার মাঝে (রুকু ও সেজদা অবস্থায়) তার পিঠ সোজা করে না।
(আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ০১/১৯৮)
এ কারণে নামাজের সাধারণ বিষয়ে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।
যাতে মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে তথ্য না থাকায় আমাদের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
আর নামাজ না পড়ার গুনাহ থেকে রক্ষা পাই।
যেভাবে আমরা আমাদের দুনিয়া ও পার্থিব সব বিষয়ের উন্নতির জন্য আগ্রহ দেখাই,
এর চেয়েও বেশি, নিজের নামাজকে সঠিক করতে এবং প্রকৃতপক্ষে তা কবুল করাতে আরও বেশি আগ্রহ ও পরিশ্রমের প্রয়োজন।
শুধু মাত্র নামায নয় বরং প্রত্যেকটি ইবাদাত করার সময় অন্তরে এই নিয়ত রাখা যে এই ইবাদাত শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য।
এবং প্রতিটি ইবাদাত কে সঠিক ভাবে নিয়ম কানুন জেনে ও সঠিক ও সুন্দর ভাবে আদায় করার চেষ্টা করা দরকার।
কারণ যে কোন কাজ যা সঠিক ভাবে করা হয় না তার ফলাফল ও সঠিক পাওয়া যায় না।
তাই নিয়মনীতি জেনে কাজ করতে হবে।
নিয়ম কানুন না জেনে নামাজ আদায় করলে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসে যেই ধরনের চোরের কথা বলা হয়েছে,
আমরা তার মধ্যে শামিল (সংযুক্ত) হয়ে যাবো এবং নামায নিজে আমাদের উপরে অভিশাপ করবে।
তাই আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও অভিশাপ থেকে বাঁচতে হলে বিশেষ করে নামাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল গুলো মোটামুটি অবশ্যই জেনে রাখতে হবে।
সাথে সাথে ধৈর্য্য ও ধীরস্থির ভাবে নামায ও প্রতিটি ইবাদাত এই আশায় করে যেতে হবে যে নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার এই ইবাদাত (নামাজ) অবশ্যই কবুল করবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নামাজের আসল রূপ দান করুন ও আমাদের সকল ইবাদাত কবুল করুন, আমীন।
-:আরো পড়ুন:-
নামাজ কবুল হওয়ার শর্ত কি?
নামাযের মধ্যে এহসান এতো জরুরি কেন?
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।