মুহাররাম মাসের গুরুত্ব ও ফযীলত
Muharram Maser Gurutto o Fozilot
সম্মানিত ঈমানদার ভায়েরা!
আজকে আমরা মুহাররাম মাসের গুরুত্ব ও ফযীলত এবং মুহাররম মাসে আমাদের করণীয় আমল কি? সেই সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ।
প্রত্যেক বছরই এই ১০ ই মুহাররম আসে।
শরীয়তের পরিভাষায় এ দিনটাকে (১০ ই মুহাররম কে) বলা হয় ”ইয়াওমে আশুরা” অর্থাৎ দশম দিন।
মনে রাখবেন, আল্লাহ তায়ালা বছরের দিনগুলির মধ্যে কিছু দিনকে বিশেষ ফযীলত দিয়েছেন, এবং সেসব দিনে বিশেষ কিছু ইবাদত রেখেছেন।
মুহাররম মাসও একটি মুবারক বা পবিত্র মাস।
পবিত্র কুরআন মজীদের সূরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ৪ টি মাসকে সম্মানিত মাস বলে ঘোষণা করেছেন।
তার মধ্যে একটি হল “মুহররম ” মাস।
আর এই মুহাররম মাসের দশম দিনে (দশ তারিখে) আল্লাহ তায়ালা খুবই ফযীলত ও বরকত রেখেছেন।
রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়ার আগে মুহররম মাসের দশ তারিখ, অর্থাৎ আশুরার রোযা ফরয ছিল।
রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পরে আশুরার রোযা নফল হিসাবে গন্য হয়।
একটি জরুরী কথা মনে রাখবেন, কেউ কেউ বা অনেকেই এটা মনে করেন যে,আশুরার দিনের গুরুত্ব এ জন্যে যে:-
এ দিনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরম স্নেহের নাতি হযরত হুসাইন (রযিয়াল্লাহু আনহু) কারবালার প্রান্তরে ইয়াযীদের সেনা বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
তাঁর শহীদ হওয়ার কারণে এ দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
কারণ এ মাসের ফযীলতের কথা কুরআন মজীদে বর্ণিত আছে।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আশুরার ফযীলত বায়ান করেছেন।
আর হযরত হুসাইন (রযিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের ঘটনা নবীজির ইন্তেকালের প্রায় ৬০ বছর পর হয়েছে।
সুতরাং এ কথা ঠিক নয় যে, দশই মুহাররমের ফযীলত হুসাইন (রযিয়াল্লাহু আনহু) এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে হয়েছে।
তবে এটা সত্য যে, এই ফযীলতপূর্ণ দিনে হুসাইন (রযিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের কারণে তাঁর মর্যাদা ও সম্মান আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুহাররাম মাসের দশ তারিখের আমল
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা আশুরা তথা ১০ই মুহাররমের আমল সম্পর্কে জানবো।
ইয়াওমে আশুরাহ বা ১০ই মুহাররামের বিশেষ আমল হল রোযা রাখা।
সহীহ মুসলিমের ১১৩২ এবং সহীহ বুখরীর ১৯০২ নম্বর হাদীসে বর্ণিত আছে,
হযরত ইবনে আব্বাস (রযিয়াল্লাহু আনহু) কে আশুরার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান মাস এবং আশুরার দিনের রোযার চেয়ে বেশি ফযীলতের আশায় কোন রোযা রেখেছেন বলে আমার জানা নেই।
এ হাদীস দ্বারা জানা গেল যে, রমাযান মাস এবং আশুরার দিনের রোযার ফযীলত সবচেয়ে বেশি।
আশুরার দিনের রোযার সাওয়াব
সহীহ মুসলিমের ১১৬২ নম্বরের একটি দীর্ঘ হাদীসে হযরত আবু কতাদাহ (রযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ
“রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরা (মুহাররম মাসের ১০ তারিখ)-এর রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তখন তিনি বলেছিলেনঃ
“আশুরার রোযার বিনিময়ে (বদলে) বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়।” সুবহানাল্লাহ!
(মুসলিম শরীফ: ১১৬২)
উম্মতে মুহাম্মাদীর একটি বৈশিষ্ট
ভাই সকল! আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহম্মাদীকে এমন কিছু বৈশিষ্ট দান করেছেন যা অন্য কোন উম্মতকে তিনি দেননি।
তার মধ্যে একটি বৈশিষ্ট হল, অল্প ইবাদতের বিনিময়ে বেশি সাওয়াব পাওয়া।
এ সম্পর্কে আমরা একটি হাদীস লক্ষ্য করিঃ
সহীহ বুখারীর ২২৬৭ নম্বরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে,
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের এবং ইয়াহুদী ও নাসারা অর্থাৎ খৃষ্টানদের দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির মত,
যে কাজের জন্য কিছু মযদূর নিয়ে বলল, এক কীরাত পরিমান পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কে আমার জন্য দিনের শুরু থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করবে?
সুতরাং ইয়াহুদিরা এক এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করল।
অতঃপর তিনি বললেনঃ দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক এক কীরাতের বিনিময়ে কে কাজ করবে?
সুতরাং নাসারা বা খৃষ্টানরা আসর পর্যন্ত এক এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করল।
অতঃপর তোমরা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত কাজ করছ দুই দুই কীরাতের বিনিময়ে।
কাজেই ইয়াহুদী ও নাসারারা রেগে বলে উঠে, আমরা কাজ করলাম বেশি আর পারিশ্রমিক কম!
তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কি তোমাদের পাওনা হকের ব্যাপারে যুলুম করেছি? তারা বলে, না।
তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, এটা আমার ফযল-অনুগ্রহ আমি যাকে চায় তাকে দিয়ে থাকি।
আশুরার দিনের রোযার সাওয়াব অনেক বেশি, তাই আমাদের এই রোজা রাখার চেষ্টা করা দরকার।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে এই মুহাররম মাসের দশ তারিখের রোযা রাখার তৌফিক দান করুন, আমীন।
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।