প্রিয় পাঠক! গত পোষ্টের মধ্যে আমরা ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে কি না? সে সম্পর্কে কিছু ঘটনা আলোচনা করেছিলাম। আজকেও আমরা আরো কিছু বিষয় ও ঘটনা আলোচনা করব।
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
(পর্ব- ২)
Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
ইসলাম প্রচার সম্পর্কে ইউরোপীয়দের ধারণা
ইউরোপের জনগণরা বিশ্বাস করে যে ইসলাম প্রসারে তলোয়ারের (তরবারির) শক্তি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে,
এবং দলীল বা প্রমাণ হিসেবে তারা সেইসব যুদ্ধের ঘটনা গুলো পেশ করে যে মুসলিম বাদশারা কত পরিমাণ রক্তপাত করেছে।
আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি যে কোনও বিবেকবান ব্যক্তি বলতে পারবে না যে যুদ্ধ একেবারেই সভ্যতার বিপরীত।
আজকে যারা নিজেদের সভ্য বলে মনে করে তারাও প্রয়োজনে যুদ্ধ করে,
জানা গেল যে প্রয়োজনে যুদ্ধ করা কোন অবৈধ নয়।
আমি অত্যাচারী বাদশাদের তো সমর্থন করছি না, তবে খেলাফায়ে রাশিদীন দের ব্যাপারে দাবি করে বলতে পারি যে তারা কোন দুর্বল (সাধারণ, সামান্য) বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ করেননি।
তাঁরা কেবল কোন শক্তিশালী বা মজবুত কারণেই যুদ্ধ করেছেন।
আর যুদ্ধ সম্পর্কে ইসলামী আইনকানুন যদি বিরোধীরা বুঝতো তাহলে তারা এই ধরনের কথা কখনই বলতো না যে, ইসলাম তলোয়ারের ক্ষমতার মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
ইসলাম যুদ্ধের আইনকানুন সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছে, তবে আমি এই কিছু সংক্ষিপ্ত আইনকানুন বর্ণনা করছি।
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে-Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
ইসলাম কি সত্যিই তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
Islam ki sotti Talwarer jore prochar hoyeche?
ইসলামী আইন
ইসলামে একটি মাসআলা আছে আর খুলাফায়ে রাশিদীনরা তার প্রতি সর্বদা আমল ও বাস্তবায়ন করেছেন যে,
যদি কোন ব্যক্তি তোমার পিতা, তোমার পুত্র ও ভাই অথবা তোমার সমস্ত প্রিয়জনকে হত্যা করে দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে হত্যা ও রক্তপাত করতে থাকে,
আর কোন সময় যদি সে তোমার কাবু বা সে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, আর তুমি তার প্রতিশোধ নিতে চাও ঠিক সেই সময় সেই ব্যক্তি নিজের মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে,
তখন ইসলামের নির্দেশ হলো যে তুমি তাকে অবিলম্বে (তাড়াতাড়ি) ছেড়ে দাও,
যদিও তোমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে যে সেই ব্যক্তি তার জীবনের ভয়ে (জীবন বাঁচানোর ভয়ে) ঐ কালেমা পড়েছে, অন্তর থেকে ইসলাম কবুল করেনি।
তারপরও সঙ্গে সঙ্গে তার উপর থেকে তলোয়ার (তরবারী) সরিয়ে নাও।
অন্যথায় যদি তুমি তাকে কতল (হত্যা) করে দাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে,
যদিও এই আশঙ্কাও আছে যে সে ঐ সময় নিজের জীবন বাঁচিয়ে পরে তোমাকে হত্যা করবে,
যায় হোক না কেন, এখন তাকে হত্যা করা কোনমতেই জায়েয নয়।
তাহলে যে ধর্ম অন্যের হাতে এত বড় সুপার (ঢাল) দিয়ে দিয়েছে, তার সম্পর্কে কেউ কি বলতে পারে যে সেই ধর্ম (ইসলাম) তরবারী বা অস্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়েছে?
বিশ্বাস করুন, আমাদের সালাফে সালেহীনগণ এই আইন (বিধানটি) পুরোপুরি মেনে চলতেন।
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে-Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
হুরমুযানের ঘটনা
হরমুযান মুসলমানদের অনেক কষ্ট দিয়েছিল ও ক্ষতি করেছিল, অবশেষে তাকে গ্রেফতার করে হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে আনা হয়,
হজরত ওমর (রা.) তাকে ইসলাম কবুল করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি, তিনি তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন।
সে (হুরমুযান) এমন একটি কৌশল করলো যে, সে হজরত ওমর ফারুক (রা.)-কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনি তো আমাকে মেরে ফেলবেন, কিন্তু হত্যা করার আগে আমাকে একটু পানি দিতে বলুন,
তাই তিনি (হযরত উমর রঃ) পানি নিয়ে আসতে বললেন।
যখন পানি নিয়ে আসা হলো তখন হুরমুযান বললো যে আমার ভয় হচ্ছে যে পানি পান করার আগেই হয়তো আমাকে জল্লাদ মেরে ফেলবে।
হযরত উমর (রঃ) বললেন কক্ষনো না।
যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এই পানি পান না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে কতল (হত্যা) করা হবে না।
এই কথা শুনে সে পানি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো যে, তুমি আমাকে আর মারতে পারবে না, কেননা এই পানি পান করা আর সম্ভব নয়।
আর তুমি আমাকে বলেছিলে যে যতক্ষণ আমি এই পানি পান না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে মারবে না।
হজরত ওমর ফারুক (রা.) তাকে আজাদ (স্বাধীন) করে দিলেন।
হুরমুযানের নিজের উপর এতটাই ভরসা ছিল যে, সে খুব ভালো ভাবে জানতো যে, হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর এই কথা যে, “তুমি পানি পান না করা পর্যন্ত তোমাকে হত্যা করা হবে না” কক্ষনো কতল করা হবে না।
এই ঘটনা দেখে হুরমুজান তৎক্ষণাৎ ইসলাম কবুল করে নিল যে, এই দ্বীন (ধর্ম) সত্য, এই ধর্মে বিরোধীদের সাথেও এত ভালো ব্যবহার করা হয়।
এর পরেও কি বলা হবে যে ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
এই সমস্ত কথা হযরত মৌলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর “আশরাফুল-জাওয়াব” নামক কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:-
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।