এই পোস্টের মধ্যে আপনার জানতে পারবেন যে ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে? নাকি ইসলাম নিজের সঠিক ও সুন্দর শিক্ষা দ্বারা প্রচার হয়েছে?
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
ইসলাম কি তলোয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়েছে?
(পর্ব:- ১)
পৃথিবী জুড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে এই কথা প্রচার করা হয় যে ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রচার করা হয়েছে?
এই কথা কতটা সঠিক, আসুন আমরা জেনে নিই।
যদি তরবারীর শক্তিতে মানুষকে ইসলামে আনা হয়, তাহলে তরবারী তাদের অন্তরে কিভাবে প্রভাব ফেলে?
আর অন্তরে প্রভাব পড়ার কারণ হল, তাঁদের আখলাক চরিত্র ছিল অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং শরিয়তের শিক্ষার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়।
হযরত আলী (রঃ) এর বর্মের ঘটনা
হযরত আলী (রঃ) বর্ম চুরি হয়ে যায়।
তিনি একজন ইহুদীর কাছে সেই বর্ম দেখতে পায়, তিনি তার চিনতে পেরে বললেন যে এটি আমার বর্ম,
ইহুদী বলল, সাক্ষী নিয়ে আসুন।
আল্লাহু আকবার! তিনি নিজেকে কতটা ইসলামী শিক্ষার আদর্শে পরিণত করেছিলেন যে, যেমন কথার মাধ্যমে লোকদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, ঠিক তেমন কাজও করে দেখিয়েছিলেন।
যার কারণেই একজন ইহুদি প্রজা রাষ্ট্রের শাসক, মুসলমানদের খলিফাকে সাক্ষী আনতে বলার সাহস পেয়েছিল!
এমনিতেই ইহুদী জাতি নিজেরাই বহু আগে থেকে লাঞ্ছিত ছিল।
যখন থেকে তারা হজরত মূসা (আ.)-কে অসম্মান ও অবাধ্য করেছে, তখন থেকেই তারা লাঞ্ছিত ও অধঃপতনের মধ্যে রয়েছে এবং এখনও আছে।
এক তো লাঞ্ছিত সম্প্রদায় সাথে সাথে হযরত আলী (রঃ)-এর শাসনের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তার এতো বড় এত সাহস,
প্রিয় পাঠক! এটাই প্রকৃত স্বাধীনতা, আজকাল যে স্বাধীনতা চলছে তা নয় যে ধর্মকে ত্যাগ করে দিয়েছে, আল্লাহ এবং নবীকে ছেড়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতা মানে হলো হকদারের মুখ যেনো বন্ধ না করা হয়।
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে-Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘটনা
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন অবস্থা ছিল যে, তিনি এক ইহুদীর কাছে কিছু ঋণী ছিলেন।
একদিন সেই ইহুদী নবীজীর মসজিদে এসে রাসুলুল্লাহর সম্মানে অসম্মানজনক কিছু কথা বললো।
সাহাবায়ে কেরাম তাকে হুমকি দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
إنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالاً.
অর্থঃ হকদারের জন্য কিছু কথা বলার সুযোগ আছে।
(বুখারী শরীফঃ ২৩৯০)
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
তাই স্বাধীনতা এরকম হওয়া উচিত যাতে প্রজারা এতটা স্বাধীনতা পায়।
হযরত আলী (রাঃ) নিজের আমল (কাজ) দ্বারা এতটাই স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন যে, সে ইহুদী বলল, সাক্ষী নিয়ে আসো, নাহলে কাজীর কাছে অভিযোগ জানাও।
হযরত শুরাইহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হজরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর সময় থেকে কাজীর (বিচারকের) পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন,
তাই, হযরত আলী (রঃ) গিয়ে হযরত শুরাইহ রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছে অভিযোগ দায়ের করেন,
উভয়েই সমানভাবে বাদী ও বিবাদী হিসেবে আদালতে যান।
হজরত শুরাইহ (রাঃ) শরীয়তের বিধান ও নিয়মকানুন অনুযায়ী পরস্পর জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
এমন নয় যে আমীরুল মুমিনীন (রঃ) এর আসার কারণে তিনি একদম হতভম্ব হয়ে গেলেন।
তিনি অত্যন্ত স্থিরতার ও নির্ভয়ে ইহুদীকে জিজ্ঞাসা করলেন বর্মটি হযরত আলী (রাঃ) এর কিনা।
সেই ইয়াহু অস্বিকার করেলো, তারপর হজরত আলী (রঃ)-কে সাক্ষী আনতে বললেন।
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে-Islam ki Talwarer jore prochar hoyeche?
ইসলাম কিভাবে প্রচার হয়েছে?
Islam kivabe prochar hoyeche?
হযরত আলী ও ইহুদী সম্পর্কে কাজীর (জজের) সিদ্ধান্ত
আল্লাহু আকবার! একবার দেখুন যে নিজের প্রজাদের কে স্বাধীনতা কেমন দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের একজন সাধারণ বিচারক আমিরুল মুমিনীনকে সাক্ষী আনার কথা বলছেন, আর আমিরুল মুমিনীন হলেন হযরত আলী (রাঃ) যার বিরুদ্ধে কোনো অবাস্তব ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু এটা শুধুমাত্র নিয়ম কানুনের কারণে হয়েছে।
তাই হযরত আলী (রঃ) দু’জন সাক্ষী নিয়ে আসেন, একজন ইমাম হাসান (যিনি তাঁর পুত্র ছিলেন) এবং একজন কুনবার নামক তাঁর স্বাধীন গুলায় (মুক্তকৃত দাস)।
হযরত শুরাইহ (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ ছিল যে হযরত শুরাইহ (রাঃ) পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্যকে জায়েজ (বৈধ) মনে করতেন না।
আর হযরত আলী (রাঃ)-এর মতে পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য জায়েয ছিল।
তাই হযরত আলী (রাঃ) হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)-কে সাক্ষী হিসেবে পেশ করলেন।
ইলমী ও ইজতিহাদী মতপার্থক্য মন্দ নয়
আজকে আলেম ওলামাদের মতপার্থক্য ও ভিন্নমতের জন্য তাঁদেরকে খারাপ বলা হয়।
এই মতপার্থক্য ও বিতর্ক সাহাবায়ে কেরাম দের যুগ থেকেই চলে আসছে,
তবে আজকালের মতো উলামায়ে কেরাম দেরকে খারাপ বলতে হতো না।
তারা একে অপরকে অপমান ও ছোট করতো না।
আজকাল গালিগালাজ হওয়ার বেশিরভাগ কারণ হল চারিদিকে ছোটদের হাতে ক্ষমতা ও দায়িত্বর প্রচলন হয়ে গেছে।
আকাবির (বড়রা) নিজেরাই আপসে মিলে না যে সঠিক বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
ছোটরা যা বলে, যা করে সেটাকেই সঠিক বলে মেনে নেওয়া হয়।
এমনও হয়না যে বর্ণনাকারী কে বকে চুপ করিয়ে দেয়।
যায় হোক হজরত আলী (রা.)-এর এই মত ছিল যে নিজের পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য বৈধ এবং শুরাইহ (রা.) এই বিষয়ে টিকে জায়েজ মনে করতেন না।
তাই হযরত শুরাইহ (রাঃ) নিজের ইজতিহাদ (গবেষণা) অনুযায়ী এবং ইমাম হাসান (রঃ)-এর সাক্ষ্য গ্রহণ করেননি।
আর হযরত আলীকে বললেন, যেহেতু গুলাম (দাস) আজাদ (স্বাধীন) হয়ে গেছে, তাই তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য, তবে হযরত হাসানের পরিবর্তে অন্য একজন সাক্ষী নিয়ে আসুন।
হজরত আলী (রাঃ) বললেন, এছাড়া আর অন্য কোনো সাক্ষী নেই।
অবশেষে হযরত শুরাইহ (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ) এর দাবী খারিজ (প্রত্যাখ্যান) করে দিলেন।
কাজীর (বিচারকের) ফায়সালায় খুশি
আজকের যুগের মুসলমান হলে তারা হযরত শুরাইহ (রা.) এর সাথে ঝগড়াঝাঁটি ও লড়াই করতে লাগতো,
কিন্তু হযরত শুরাইহ (রা.) এবং হযরত আলী (রা.) তাদের মতো ধর্ম বিক্রি করতেন না ও ধর্মের বিরুদ্ধে যেতেন না।
তাঁরা ধর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
যদি হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে হযরত শুরাইহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হতো তাহলে তিনি কসম (শপথ) করে বলতে পারতেন যে হযরত আলী রাঃ সত্যবাদী।
কিন্তু যেহেতু শরীয়াতের নিয়মকানুন তার অনুমতি দেয় না, তাই তিনি নিজের বিশ্বাস ও ভক্তির উপর আমল করেননি।
ইয়াহুদীর ইসলাম গ্রহণ
অবশেষে যখন ইহুদী বের হল, তখন সে দেখল যে হযরত আলীর চেহারায় অসন্তুষ্টির সামান্যতম প্রভাবও নেই। অথচ তিনি আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) এবং রাষ্ট্রের বাদশা।
তাহলে কি সেই জিনিস, যার কারণেই তিনি রাগান্বিত হননি?
কিছুক্ষণ ভেবে সে বললো, আসলে এখন আমি বুঝে গেছি যে আপনার ধর্ময একেবারেই সত্য, তারি কারণেই এই প্রভাব।
ইয়াহুদী বললো!
নিন! এই বর্মটি আপনার এবং আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছি এবং আমি বলছি:
“اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمداً عبدہ و رسولہ“
“আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদন আবদুহু ওয়া রসূলুহ”।
অতঃপর তিনি (আলী) বললেনঃ এই বর্মটি আমি তোমাকেই দিলাম, তুমিই রাখো।
অতএব, সেই ইহুদী মুসলমান হয়ে তাঁর সঙ্গে থাকে, এবং একটি ইসলামী যুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়ে যায়।
এখন বলুন, সে কি তার মাথায় হযরত আলীর তলোয়ার দেখে মুসলমান হয়েছিলো, তলোয়ারটি নিয়ামের ভিতরে ছিলো?
তারপরও কি বলা হবে ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রচার হয়েছে?
এই সমস্ত কথা হযরত মৌলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর “আশরাফুল-জাওয়াব” নামক কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন
জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দুআ
নিজের প্রিয়জন দের স্পেশাল ভাবে সালাম পাঠান
👇👇👇
এখানে নিজের নাম লিখে পাঠিয়ে দিন
আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় পাঠক!
আমার নাম মোঃ নাজামুল হক, আমি একটি ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষক।
আমি মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইনে ইসলামিক প্রবন্ধ লিখতে থাকি, যাতে মানুষ সঠিক বিষয় জানতে পারে।
আপনি আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্য থেকে উপকৃত হন।
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আমাদের কোন ভুল সম্পর্কে জানাতে চান, তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, জাযাকুমুল্লাহু খাইরন।